অলসতা থেকে মুক্তির উপায়

আপনি যাকে “অলসতা” বলছেন তা হতে পারে ক্লান্তি, অনুপ্রেরণার অভাব বা কাজে অমনোযোগী। আপনি কেমন অনুভব করেন তার কারণ অনুসন্ধান
করা এটির সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ। তবে যদি আপনি দেখতে পান যে আপনি প্রায়শই অলস দিন কাটাচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলি সম্পন্ন করতে আপনার সমস্যা হচ্ছে, এটি একটি লক্ষণ হতে পারে যে কিছু ভুল কোথাও হচ্ছে।
চলুন আমরা খুজে বের করি কিভাবে অলসতা বন্ধ করে আপনি আরও কর্মঠ, উত্পাদনশীল ও জীবন লক্ষে সফল হতে পারেন।

অলসতা দূর করার উপায়
“আমি কীভাবে অলসতা দুর করতে পারি? উত্তরটি আপনার প্রত্যাশার মতো না হলেও এর মধ্যে তা খুজে পাবেন। যদিও কিছু মানুষের মধ্যে অন্যের চেয়ে বেশি অলস হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, এমনকি অতি কর্মঠ মানুষের কাছেও কখনও কখনও কিছু কাজ সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জ মনে হতে পারে।

১) সহজে সম্পন্ন করা যায় এমন লক্ষ্য নির্ধারন করুন
অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারন এবং পরিকল্পনাহীন ভাবে সেটাকে অতি দ্রুত সম্পাদন করার ইচ্ছা থেকে জব বার্নআউট ক্লান্তি, কাজে আগ্রহ এবং অনুপ্রেরণা হ্রাস এবং কাজ থেকে পালানোর আকাঙ্ক্ষার কারণ হতে পারে। কাজ গুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে সম্পন্ন করুন, অভারলোডিং এড়িয়ে চলুন।

২) নিজেকে নিখুঁত করার আশা পরিত্যাগ করুন, কারন এটি আমাদেরকে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার দিকে নিয়ে যায়
মানুষ যেকোনও একটি সামাজিক পরিবেশ ও চাহিদা অনুযায়ী শতভাগ নিখুত হতে পারবেনা, কেউ পারেও নাই। ১৯৮৯ থেকে ২০২১৬ পর্যন্ত কলেজ
শিক্ষার্থীদের উপর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতি বছরে নিখুত বা পরিপুর্ন গুনে গুণান্বিত হওয়ার প্রবনতা সম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষকরা বলেন, “আগের প্রজন্মের তুলনায় তরুণরা এখন আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ, আরও অবাস্তব প্রত্যাশা এবং আরও উদ্বিগ্ন নিয়ে পিতামাতা ও সমাজের মুখোমুখি হচ্ছে। পারফেকশনিজমের এই উত্থান মানুষকে নিজের এবং অন্যদের সম্পর্কে অত্যধিক সমালোচনা করার কারণ ঘটাচ্ছে। এটি তাদের হতাশা, বিষাদ এবং উদ্বেগ বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করছে। পারফেকশনিজম বা নিখুত হওয়ার ইচ্ছা পরিত্যাগের সাথে সাথে আপনি হতাশা, বিষাদ এবং উদ্বেগ থেকে মুক্তি পাবেন।

৩) একটা কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করুন। বড় কাজটিকে ছোট অংশে ভাগ করে নিন ও প্রতিদিন একটু একটু করে সম্পন্ন করুন 

৪) নিজেকে পুরস্কৃত করুন

একটি সম্পাদিত কাজ নিজেই একটি পুরস্কার। কিছু করার মাধ্যমে আপনি কী লাভ করবেন তার উপর ফোকাস করুন, নিজেকে সকল কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা বা দূরে বেড়াতে যান।

৫) উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খান 

আপনি কি ভাবছেন “কীভাবে আমি অলস হওয়া বন্ধ করতে পারি?” উচ্চ-প্রোটিন যুক্ত খাবার আপনার শক্তি বাড়ায় এবং আপনার রক্তে শর্করাকে স্থিতিশীল রাখে তাই আপনার অলস এবং অলস বোধ করার সম্ভাবনা কম থাকে।
যেমন:
ডিম
বাদাম
দই
টুনা

৬) চিনিযুক্ত এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন

খাদ্যে পুষ্টির সাথে শারীরিক কর্মক্ষমতা যুক্ত। আপনার শক্তি ক্ষয় করে এমন খাবারগুলি থেকে দূরে থাকুন কারণ সেগুলি হজম করতে ধীর বা রক্তে
শর্করার বৃদ্ধি ঘটায়।
এর মধ্যে রয়েছে:
উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয়,
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন সাদা রুটি এবং পাস্তা,
অ্যালকোহল,
ভাজা খাবার এবং ফাস্ট ফুড।

৩) শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম

অন্যান্য অনেক সুবিধার পাশাপাশি ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম অলসতা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি নিশ্চিত উপায়। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যায়ামেই
পেতে পারেন অফুরন্ত শক্তি, প্রফুল্ল মেজাজ এবং সেই সাথে দুর হবে উদ্বেগ, স্ট্রেস এবং বিষণ্নতা। অলস অনুভূতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিদিন
পরিশ্রম করুন হাটুন বা সাইকেল চালানোর চেষ্টা করুন।

৭) ঘুম এবং বিশ্রাম
রাতে ভালো ঘুমের জন্য দুপুরের ঘুম বন্ধরাখুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমান এবং সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘুমের জন্য বরাদ্দ রাখুন।

৮) মানসিক চাপ নিয়ত্রন করুন
মানসিক চাপ শারীরিক পরিশ্রম থেকে উদ্ভুত নয় এটা মনের দৃষ্টিভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিকতার সাথে পছন্দ ও ইচ্ছার সংঘর্স থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস আপনাকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্লান্ত বোধ করায়। স্ট্রেসের সাথে মোকাবিলা করার জন্য কৌশলগুলি সন্ধান করা অত্যন্ত জরুরী। নিজের পছন্দমতো কাজে ব্যস্ত থাকা, প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো, একটি পোষা প্রাণীকে আলিঙ্গন করা এবং বাগানের গাছ গুলোর পরিচর্যায় সময় দেওয়া ইত্যাদি কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ত্রন করুন।

৯) সঙ্গে পানি রাখুন
পানীয় জলের উপকারিতা অবিরাম এবং অনেকগুলি অলসতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। হাইড্রেটেড থাকা শক্তির স্তর এবং মস্তিষ্কের
কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। আপনি যদি অলস বোধ করছেন তবে কয়েক চুমুক পানি আপনাকে
সজিব ও প্রানবন্ত করতে সহায়তা করতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা

অনেক মানসিক অবস্থা এমন উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে যেগুলি আপনি অলসতা বলে ভুল করতে পারেন, যেমন
* অনুপ্রেরণার অভাব
* দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি এবং
* সামাজিক প্রত্যাহার।
* বিষণ্নতা
* উদ্বেগ
* সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (এসএডি)
* বাইপোলার ডিসঅর্ডার
* পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)
* তীব্র স্ট্রেস বা বিষণ্ণতা।

দৈহিক অবস্থা
আপনার দৈহিক অবস্থা আপনার কর্ম ক্ষমতার স্তরে পরিবর্তন আনতে পারে এবং আপনি সাধারণত যেভাবে কাজ করতে সক্ষম হন তাতে আপনাকে বাধা দিতে পারে।
যেমনঃ
রক্তাল্পতা
ভিটামিনের অভাব
থাইরয়েড রোগ
লো ব্লাড সুগার
ডায়াবেটিস
অ্যাডিসন এর রোগ
দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তির লক্ষণ
হৃদরোগ
ক্যান্সার

যোগব্যায়াম বা ধ্যানের মতো শিথিলকরণ কৌশলগুলি ব্যবহার করে দেখুন।

সর্ব শেষে
অলসতা সর্বদা খারাপ জিনিস নয় এবং একটা সময় প্রায় প্রত্যেকেরই একটি ধীর স্থির দিন আশা করে থাকে। কীভাবে অলস হওয়া বন্ধ করা যায় তা খুজে বেড় করা আপনার জন্য অত্যন্ত সহজ হয়ে যেতে পারে যদি আপনি সত্যিই কর্মঠ হতে চান। এরপরেও যদি আপনার অলসতা দুর করতে সমস্যা হয় তিন জন চিকিতসকের সাথে কথা বলুন।

যেমনঃ
* মেডিসিন ডাক্তার
* মানসিক ডাক্তার
* পুষ্টিবিধ